Wednesday, May 27, 2020

গল্পঃ বৃষ্টি কুমার (কাল্পনিক) | লিখা: হুমায়রা নাজনীন অর্পা

ইশ্! বৃষ্টি আসলে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। আমার প্রেম ভালবাসা যেন এই প্রকৃতির বৃষ্টি। বৃষ্টির আগমনী বার্তা টের পেলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা। আমি পাগল হয়ে যাই। আমার ঠান্ডা লাগার প্রব্লেম থাকলেও মাতাল হয়ে যাই আমি। আসুক জর আসুক I don't care!!!!!
দাড়াও তোমার কেয়ার করা দেখছি! বলেই শরীফ ছুটল আম্মুর কাছে।
ধুর! এই পাজির হাড্ডিটার জন্য ভেজাও যায়না। ওহ বলতেই ভুলে গেছি। শরীফ আমার ছোট ভাই। ওরফে মায়ের চামচা কিছু একটা হলেই আমার নামে মায়ের কাছে বলে দিবে। ছুড়া বড়ই বদ। আব্বু সব সময় আমার পক্ষেই নেন। আম্মু বেশি বেশিই বকে।

যাই হোক নয় নম্বর বিপদ সংকেত আম্মুর দিক থেকে আসার আগেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। ঢুকেই বাইরে আম্মুর চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। পাত্তা দিয়ে লাভ নাই। হু হু হা হা। আসলেই ভিলেন লাগছে নিজেকে। শরুর আজকে খবর আছে। কেউ বুঝবেনা বৃষ্টির পানির মধ্যে আমার প্রেম লুকিয়ে আছে।
ভার্সিটি যেতেই হবে অসহ্য স্যার ক্লাসে ইম্পরট্যান্ট কি টপিকস যেন ডিসক্যাস করবে। ধুর! এখন একটা ঘুম দিব তা নয় অসহ্য! নাতাশা এইমাত্র জানালো। বিকেলে টিউশনি টাও আছে। নাহ শান্তি নাই।
সারা দিন ব্যস্ততার পর রাতে বিছানাতে শুতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। একটু অদ্ভুত স্বপ্ন আসলো ঘুমের মধ্যে।
আমি পাগলের মত ভিজছি। এমন সময় দেখলাম বৃষ্টির ফোটা গুলা কেমন যেন মানুষের আকৃতি ধারণ করেছে। আস্তে আস্তে একজন যুবকের আকৃতি ধারণ করল।
পানি দিয়ে তৈরি হওয়া শর্তেও আমি কেমন জানি ওর চোখ মুখ সব বুঝতে পারছিলাম। ও অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে বলল - ভয় পাচ্ছ?
নাহ মোটেও না।
চিনতে পারছো? আমি বৃষ্টি কুমার। যার ভালবাসায় তুমি ভিজো। তোমার হাতটা একটু দেবে আমায়?
আমি কাঁপতে কাঁপতে হাতটা দিলাম।
আপুউউউউউউ! তোর কি হইছে? তুই তোর টেবিলের জিনিস ঘুমের মধ্যে ঠেলছিস কেন?
আবার এই পিচ্চি অসহ্য! দিল ঘুম শেষ করে।
ঐ তুই আমার রুমে কেন? হা?
আম্মা পাঠিয়েছে। কি বলবে যেন। খেয়ে দেয়ে কাজ নেই পেত্নীর রুমে আসব তা ছাড়া। ঘুমের মধ্যে কি করছিলে হু? আম্মারে বলছি তোমার মেয়ে না ঘুমের মধ্যে কি যেন করছে! বলেই দৌড় দিল।
নাহ এই ছিচকে বান্দর আমার জিবন শেষ করে দিল। এমন করলে হয়? নাহ আর পারিনা। কিন্তু আমার কেমন জানি অদ্ভুত ভাল লাগছে। আচ্ছা বৃষ্টি কুমার কি সত্যিই আছে?নাহ কি হচ্ছে প্রেমে পড়ে গেলাম নাতো।
হুমায়রা!
আসছি আম্মু!!! তড়িঘড়ি করে নেমে গেলাম। আজ তো তোমার ক্লাস নাই। চল তোমার মামার বাসা থেকে ঘুরে আসি।
না আম্মু ঐ পিচ্চি পাচ্চার চেঁচামেচি ভাল্লাগেনা। শরুকে নিয়ে যাওনা প্লিজ।
ভালই তো ঘর কুনো হইছো! কোথাও নিয়ে যাওয়া যায়না। তোমার আব্বা অফিসে আমি একা যাব?
শরু তো আছে। ওকে নিয়ে যাওনা প্লিজ! আর তাছাড়া বিকেলে আমার টিউশনি আছে। স্টুডেন্টের এক্সাম। কামাই করা যাবে না।
বিয়াদপ মেয়ে একটা!
আম্মু প্লিজ!
এই শরীফ রেডি হো। থাক এই অবাধ্য মেয়েটা। বাপের আশকারা তে আজ এই অবস্থা।
নাহ আম্মু খুব রাগ করেছে। কিন্তু নিজের সমবয়সী কেউ না থাকলে ভাল লাগে ধুর!
আম্মু যতই রাগ করুক না কেন যাওয়ার সময় কপালে চুমো দিয়ে বের হয়ে গেল।
আবহাওয়াটা মেঘলা মেঘলা হয়ে যাচ্ছে। একটু শীত শীত লাগছে। জর আসবে নাকি আবার।
ও মাই গড! বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ছাদে ছুটিলাম। ইশ আজ প্রাণ ভরে ভিজব।
হঠাত সব বৃষ্টির কণা জড় হতে লাগল। শরীর বেয়ে শীতল একটা বাতাস নেমে গেল। আমি ভিজছি আর কাপছি। স্বপ্ন এর কথা মনে পড়ে গেল। তবে কি!
আমার চোখের সামনেই বৃষ্টির কণা গুলা মানুষের আকৃতি ধারণ করে ঠিক স্বপ্ন এর মত।
তুমি তাহলে বাস্তব!
হুম। তোমার টানেই আজ ছুটে এসেছি। আমি তোমার বৃষ্টি কুমার।
এত দিন কেন আসেনি?
আসতে চেয়েছি। কিন্তু আসেনি। কারণ এটা স্বাভাবিক না। তোমার স্নিগ্ধতা আমায় আজকে তোমার সামনে আসতে বাধ্য করল। রোজ তোমায় ভিজতে দেখেছি আর ভালবেসেছি। ভালবাসবে আমায়? হাতটা ধরতে দিবে?
হা অবশ্যই। আমার হাতটা বাড়িয়ে দিলাম বৃষ্টি কুমারের দিকে। ও আমার হাত ধরল। ইশ কি শীতল অনুভূতি। এই অনুভূতি নিয়েই তো আমি বাঁচতে চাই।
অনেক ক্ষণ হাত ধরে থাকলাম আমরা। মেঘরাজ্যে সে থাকে। যাওয়ার সময় হলে সে আমার গাল হাত দিয়ে ছুয়ে চলে গেল।
আমি ভালবাসা পেয়েছি। আমার প্রেম খুজে।পেয়েছি। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা। এও কি সম্ভব!
বেলা শেষ হয়ে আসছে খাওয়া দাওয়া করে টিউশনি তে যেতে হবে আবার।
নাহ মেজাজ খিচড়ে গেল স্টুডেন্ট আরো একটা প্রাইভেট পড়বে তাই আমাকে আরো এক ঘন্টা লেটে যেতে হবে। মানে বাড়ি আসতে আসতেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আম্মুকে ম্যানেজ করতে হবে।
টিউশনি থেকে ফিরেই আমার কল্পনার কুমারের জগতে ডুব মারলাম আবার।
ইশ আমার আর ভাল্লাগছে না। আবহাওয়া এই কদিন ভালই যাচ্ছে ফলে বৃষ্টি হচ্ছেনা। ওর সাথে দেখাও হচ্ছেনা। নাহ আর ভাল্লাগছে না। সব অসহ্য লাগছে। এই রোদ আমার অসহ্য লাগছে।
আমি আর পারছিনা। ওকে কতদিন দেখিনা। ও কেন আসেনা। খুব মেন্টালি সিক লাগছে। আর কোন কাজে মন দিতে পারছিনা।
জানলায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি। গভীর নীল আকাশ। মেঘের কোন নাম নেই সেখানে।
" আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল
শুধাইলো না কেহ ...
সেতো এলো না, সেতো এলোনা... "
আপুউউউউউউ।
হুম বল।
কি হইছে তোমার?
কিছুনা। কিছু লাগবে তোর?
আপু আমি জানি তুমি বৃষ্টি মিস করছো তাই না?
আমি বিস্মিত হয়ে শরীফের দিকে তাকালাম। এ কেমনে বুঝলো!?
তোরে কে বলছে শরু? এমন কিছুনা।
খেতে আসো মা ডাকছে।
মা বেশ কিছুক্ষণ আমায় নিরুক্ষন করলেন।
কি হইছে?
কিছুনা। খেতে দাও।
দেখো মা আমি তোমাকে চিনি। চোখে কালি পড়ে যাচ্ছে। কিছুতো হইছে। ভার্সিটিতে কেউ কিছু বলছে?
আম্মু ক্লাসে লেট হয়ে যাব। খেতে দাও।
আম্মু আর কিছু বলল না।
ইদানিং ক্লাস ফ্রেন্ড সব অসহ্য লাগছে। আমার বৃষ্টি কুমার কি আমায় ভুলে গেল!?
নন ডিপার্টমেন্ট এর সাদেক খুব জ্বালাচ্ছে আমায়। কড়া পলিটিক্স করে। প্রপোজাল রোজ করে। ফালতু ছেলে একটা। শুনেছি ভাল স্টুডেন্ট। কিন্তু ক্যারেক্টার লুজ। প্রতিদিন জালায়। অসহ্য। কবে যে মেরে বসব। ভাল লাগে না আর। অশ্লীল একটা।
আমার স্টুডেন্ট ও পাজি। তারে পটিয়ে পাটিয়ে পড়তে বসাতেই।লাগে ২০ মিনিট। আমার tolerence limit আর কত দিন থাকবে?
ওহ! প্রকৃতি তুমি কেন সদয় হচ্ছ না আমার প্রতি!
আমার বৃষ্টি কুমার কি হারিয়ে গেল চিরতরে?
খুব কান্না পাচ্ছে। খুব।
সাদেকের ইদানিং খুব বাড় বেড়েছে। আমার হাত চেপে ধরেছিল। কষে একটা থাপ্পড় দিছি। অসভ্য ছেলে একটা। আমাকে অনেক হুমকি দিল। But I don't care.
স্টুডেন্টকে পড়িয়ে ফিরছি। আজকে মনে হচ্ছে আবহাওয়া কেমন অন্ধকার। বৃষ্টি হবে নাকি? নাহ এতদিন চেয়ে এসেছি হইনি তো। আমার বৃষ্টি কুমারের দেখা কি হবে? রাস্তাটা কেমন জানি নির্জন হয়ে আছে। অবশ্য এই সময় এইদিকে এমনি নির্জন থাকে। ঝড় উঠছে।
নাহ আরো দ্রুত পা চালাতে হবে নাহলে মোড়ে পরে গিয়ে রিকশা পাবনা।
এমন সময় কে যেন অনেক জোরে আমার হাত চেপে ধরলো।
সাদেক!!!
অবাক হয়ে গেলাম। সাদেক একা না। সাথে আরো কয়জন।
বিশ্রী একটা হাসি দিয়ে বলল অনেক দিন ধরেই ফলো করছিলাম।
তোমার কি লজ্জা নাই?
নাহ। কিন্তু কি করে প্রতিশোধ নিতে হয় সেটা জানি।
ফোটা ফোটা বৃষ্টি আমার গায়ে পড়ছে আমি মান সম্মান হারানোর ভয়ে কেপে উঠলাম। এই মুহূর্ত এ সাদেক কে আমার পিশাচ লাগছে। সাদেক আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে রাস্তাতে ফেলে দিল। আমার কুনুই ছিলে গেল।
হঠাত প্রকৃতিতে মনে হচ্ছে তীব্র তুফান শুরু হল। শুরু হল অবিরাম বৃষ্টি।
ওরা আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
বৃষ্টির ক্ণা গুলা এক হতে লাগলো। আমার বৃষ্টি কুমার ফিরে এসেছে।
সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে লাগল।
তীব্র আক্রোশে সব জল গুলা ওদের ঘিরে ধরে আছড়াতে লাগলো।
জল কণা ওদের নাক মুখ দিয়ে ঢুকতে লাগলো।
আমার চোখ ঝাপসা হয়ে যেতে থাকল।
আমি বুঝলাম আমি জ্ঞান হারাতে যাচ্ছি।
আমাকে পরম মমতায় শীতল হাত দিয়ে একজন চেপে ধরল।
হুম আমার ভালবাসা। আমার বৃষ্টিকুমার।
আমার চোখে অন্ধকার নেমে আসলো। নিজেকে বাসায় আবিস্কার করলাম। আমি বেডে শুয়ে আছি। আম্মু কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। আব্বুও চিন্তিত মুখে পাশে দাঁড়ান। শরীফের মুখটা মনে হচ্ছে ছোট হয়ে গেছে। চোখ লাল।
আব্বু আমার কি হইছে?
তোকে মোড়ে পাওয়া গেছে। লোকজন দিয়ে গেছে। তোর শরীর ভাল না। দূর্বল তাই অজ্ঞান হয়ে গেছিলি। ভাগগিস নির্জন ঐ গলির মধ্যে অজ্ঞান হসনি। তাহলে লোকজন সাথে সাথে তোকে দেখতে পেত না। আর টিউশনি তে যাওয়ার দরকার নাই। কত গুলা ছেলের লাশ পাওয়া গেছে গলিতে।
মানে?
আহ কি শুরু করলে? ও অনেক সিক। ওকে রেস্ট নিতে দাও শরুর আব্বা।
আম্মু বেশ কটমট করে তাকালো আব্বুর দিকে।
সবাই চলে গেল।
আমার বৃষ্টি কুমার ফিরে এসেছে। সে সময় মত না আসলে মান সম্মান থাকতনা। মাথা ব্যথা করছে। কিছু ভাবতে পারছিনা।
ঘুমিয়ে পড়লাম।
এখন শরীরটা বেশ ঝর ঝরে লাগছে।
আম্মু ক্লাসে যাব।
না।
প্লিজ যেতে দাওনা। অমন করছো কেন?

তোকে পথে ছেড়ে দিতে ভয় হয়। যেখানে সেখানে অজ্ঞান হয়ে থাকবি।
প্লিজ আম্মু ক্লাস মিস হলে আরো বিপাকে পড়ব। আম্মু রাজি হয়ে গেল।
ক্লাসের উদ্দেশ্য বের হলাম।
ক্লাসে অনীতা ছুটে আসলো আমায় দেখে জানিস হুমায়রা কি হইছে?
কি হইছে। বুঝেও না বুঝার ভান করলাম।
আরে সাদেক আর ওর সাংগ পাংগ গলিতে মরে পড়েছিল। আশ্চর্য ব্যপার হচ্ছে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এ বলছে পানিতে ডুবে মৃত্যু। কিন্তু খুনির কি দায় যে এতজন কে ডুবিয়ে মেরে আবার ডাংগায় এনে তাও আবার গলিতে ফেলে রাখবে। অবাক করা বিষয় না বল?
হুম আসলেই অবাক করা বিষয়।
বাসায় ফিরলাম। টিউশনি তে যাব অনেক কস্টে আব্বু আম্মুকে ম্যানেজ করেছি। মাথাটা গরম লাগছে। তাড়াতাড়ি ফিরলাম।
অনেক বৃষ্টি হল। ছাদে চলে গেলাম। আমার ভালবাসা এলো।
আর কতদিন এভাবে কস্ট দিবে আমায় বল?তুমি আসোই না আর।
আমার নিয়মের বাইরে যে পারিনা হুমায়রা।
এত রাগ হল মেরে দিলে?
হুম রাগ তো হবেই। সাহস কত। ছিন্ন ভিন্ন করে দিতাম। তোমার গায়ে কিনা হাত দেয়।
আচ্ছা বাদ দাও।তুমি এসেছো ফিরে আর যেতে দিব না।
কিন্তু হুমায়রা আমার জন্য তো সময় বরাদ্দ।
এভাবে হয়না কুমার।
আসলে দোষ আমারি।
মানে?
আমি যদি দেখা না দিতাম তবে আমার শূন্যতায় আজ তুমি কস্ট পেতে না।
আমি এত কিছু জানিনা। আমায় নিয়ে যাও কুমার। এভাবে একা করে কেন ফেলে যাও?

হুমায়রা আমি তোমাকে ভালবাসি তাই নিয়ে যেতে পারবনা।
কেন পারবে না?
কারণ তোমাকে তাহলে সব ছাড়তে হবে।
মানে?
হা।।তোমার পরিবার, এই পৃথিবী, সব কিছু।
আমি ছাড়তে পারব।
এর চেয়েও ভয়ানক ব্যপার তুমি আর মানুষ থাকবে না। আমার মত বৃষ্টি কণাতে পরিণত হবে।
হব তাই ই হব কিন্তু তোমাকে ছেড়ে থাকা অসম্ভব লাগছে আমার কাছে।
দেখো আমিও তোমাকে চাই তাই বলে তোমাকে সবার থেকে আলাদা করতে পারিনা। যদিও আমি মন প্রাণ দিয়ে তোমায় চাই কিন্তু হুমায়রা এরপর কিন্তু আর কখনো তুমি মানুষ হতে পারবেনা।
আমি হতে চাইনা।
বেশ আজকের রাতটা ভেবে দেখো। যদি সারা জিবনের মত থাকতে চাও তো আমি এসে নিয়ে যাব। আর না চাইলে আমাকে আর কখনো দেখতে পাবেনা। কি করবে কাল জানিও।
আচ্ছা।
ভালো থেকো আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
ও চলে গেল।
আমার মনে চিন্তার ঝড় বেয়ে যাচ্ছে। কি করব আমি?
ড্রয়ইরুম থেকে আব্বু আম্মুর হাসির আওয়াজ আসছে। কানে আসলো তাদের কিছু কথা।
আরে হুমায়রার আম্মু ছেলে ব্যাংককে থাকে। বিশাল অবস্থা। আমাদের হুমায়রা রাজরানী হয়ে থাকবে।
হুম। আমাদের মেয়ে সুখে থাকুক সেটাই তো আমরা চাই। আম্মুও হাসতে হাসতে বললেন।
কিন্তু শরুর আব্বা মেয়ের যদি কাউকে পছন্দ থাকে?
নো পছন্দের বিষয়। বিয়ের ব্যপারে ও কি বুঝবে। আমরা আমাদের পছন্দে বিয়ে দিব।
আমার গা হাত পা কাঁপতে লাগলো।
আমি আব্বু আম্মুকে কি বলব?
কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা ও তো মানুষ না।
কখনোই মেনে নিবে না।
আমি কি করব? উহ ভাবতে পারছিনা।
আমি ওকে খুব ভালবাসি।
আপুউউউ।
হু শরু। আয় আমার কাছে।
আপু তুমি কি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে?
আমি চমকে উঠলাম। কে বলেছে?
আব্বু আম্মু বলছে তোমাকে বিয়ে দিলে তো তুমি চলে যাবে।
হা যেতে তো হবেই সোনা।
আপু তুমি আজ এত নরম হয়ে কথা বলছো তোমার কি মন খারাপ?
নাহ। আমার মন খারাপ নয়রে পাগলা। আচ্ছা ঘুমাতে যা।
হু।
নাহ আব্বু আম্মু শরুকে ছেড়ে চলে যাব?
কিন্তু যার সাথে ঘর করব তাকে তো মেনে নিতে পারব না রোজ দগদ্ধ হব। উহ কি করব আমি।
আমার কি করা উচিত?
আমি কি করব?
আপু!
শরু! ঘুমাতে যাসনি?
নাহ আপু।
কিছু বলবি?
হু। তুমি চলে যাও আপু। তোমার বৃষ্টি কুমারের হাত ধরে।
মানে?
হু আপু আমি শুনে ফেলেছি সব। সিঁড়িঘরে দাড়িয়ে সব শুনে ফেলেছি। তুমি তো বৃষ্টি ভালবাস তুমি অনেক ভাল থাকবে।
শরু ভাই আমার তুই এখান থেকে যা। আমারে ভাবতে দে।
আচ্ছা আপু।
আমি কাঁদতে লাগলাম। সব এলো মেলো লাগছে।
আমি আর ভাবতে পারছিনা। প্রচন্ড ঘুম আমাকে গ্রাস করেছে। ঘুমিয়ে পড়লাম। মেঘের কড় কড় আওয়াজে ঘুম ভাংলো। অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। তার মানে ও চলে এসেছে। কিছু প্রয়োজনীয় কাজ সারা দরকার ছিল করলাম। ছাদে চলে আসলাম।
হুমায়রা তুমি এসেছো?
হুম।
কি সিদ্ধান্ত নিলে?
আমার জন্য পাত্র ঠিক করেছে আব্বু আম্মু। ছেলে ব্যাংককে থাকে।
বৃষ্টি কুমার এসে আমার থুতনিটা ধরে খুব কোমল গলায় বলল হুমায়রা আমি তো তোমার ভাল চাই। তোমার সুখ চাই। তোমার মন যেটা চায় করতে পারো। তোমার আব্বু আম্মুর মত আমি তোমাকেও হ্যাপি দেখতে চাই। শুধু আমার করে পাব না এই যা। তুমি তোমার আব্বু আম্মুর পছন্দের পাত্রের সাথেই বিয়ে করে ফেলো। সব চাওয়া পূরণ হতে নেই।
আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলাম।
লক্ষি মেয়ে কেদোনা।
তবে আজকে যতক্ষণ বৃষ্টি আছে আমি আছি তোমার পাশে। এর পর আর আমার দেখা পাবে না। আজকের দিনটাতে তোমার হাসি মুখ দেখতে চাই।
হঠাত মাথার ভিতর কেমন করে উঠল। আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি। তুমি আছো তো ছাদে?

হুম। বৃষ্টি যতক্ষণ আছে। আমিও আছি।
আমি নিচে চলে আসলাম। উন্মাদ লাগছে নিজেকে। আজকের পর আর দেখা পাবনা।
আব্বু আম্মু ছুটির দিন তাই শুয়ে আছেন। দরজা দিয়ে উকি মারলাম।
শরুর রুমে উকি দিলাম ও নেই। মনে হয় ওয়াশরুমে গেছে।
বৃষ্টি কুমার হাসি মুখে উঠে দাড়ালো ছাদে আসতেই।
হুমায়রা নিজের যত্ন নিও। আর অত ঘন ঘন ভেজা দরকার নাই। নিউমোনিয়া হয়ে যাবে। এবার বিদায় দাও লক্ষিটি।
পিছন ঘুরে দাড়িয়ে পড়লাম। বৃষ্টি কুমারের ঐ মায়া ময় মুখ কেন আর দেখতে পাব না? হাহাকার করতে থাকলো বুকের মধ্যে।
হুমায়রা বিদায় দাও দয়া করে। নাহলে যে আমি যেতে পারছিনা।
ওর ভাংগা কন্ঠসর আমার মনটা কাদিয়ে দিল। আমি পিছন ঘুরে দাড়িয়ে থাকলাম। ও বার বার ডাকতেই থাকল।
তখনই -
আপুনি।
শরু!
ও সিড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। ভুল করছো আপুনি।
আমি চমকে উঠলাম। ঠিকই তো। আমি ভুল করছি। বড় ভুল। যেই ভুলের মাশুল আজিবন দিতে হবে।আমি শরীফ কে জড়িয়ে ধরে বললাম ভাই আমার ভাল থাকিস। আব্বু আম্মুর খেয়াল রাখিস।
হাসতে হাসতে বৃষ্টি কুমারের হাত ধরলাম। ও অবাক চোখে আমাকে দেখছে।
তুমি যাবে আমার সাথে?
হু। তোমার সাথে।
বৃষ্টি কুমারের মুখে যেন সর্গীয় হাসি খেলে গেল।
প্রস্তুত তুমি?
হুম।
ও এগিয়ে এসে আমার কপালে চুমো খেলো। সাথে সাথে আমার শরীরটা যেন পানি কণায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। আমি শরীফ কে অশ্রু নয়নে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম।
বৃষ্টি কুমার আমার হাত ধরল। আমরা এখন পুরোপুরি প্রস্তুত হুমায়রা।
আস্তে আস্তে আমরা ভেসে চলে গেলাম।

আমি আর বৃষ্টি কুমার অনেক দিন পর আসলাম পৃথিবীতে। অনুমতি পেয়েছি আসার। আব্বু আম্মু আর শরু ছাদে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। শরুটা বেশ বড় হয়ে গেছে। ওরা তো বৃষ্টি পছন্দ করত না। তবে কি আমি যাওয়ার পর...
আমি আর ও খুব আনন্দে ভিজতে ভিজতে ফিরছি পৃথিবী থেকে। ভাল থাকুক বৃষ্টি প্রেমিরা।

No comments:

Post a Comment