আসসালামুয়ালাইকুম। গতদিনের গল্পে ব্যাপক সারা পাওয়ার পর আজ নিয়ে হাজির হলাম আরেকটি গল্প। গল্পটি হল ইতনা গ্রামের শ্মশানের গল্প। ছোটবেলা অনেক সুন্দর জীবন ছিল। এখন বড় হয়েছি আর মনে পড়ে সময়গুলি। তাই মাঝে মাঝে ভালো লাগে গল্প লিখতে। তো সেইবার আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়তাম। আমার গ্রামের এক মামার বিয়েতে বাড়ি গিয়েছিলাম। তখনের ঘটনা। আর গ্রীষ্মকাল আমার প্রিয় সময়। বিয়ের দিনও সেই সময় ঠিক করা হয়। মার্চ মাসে যাই। তখন ক্লাসও এক সপ্তাহ অফ ছিল। যাই হোক সুযোগ পেলাম। আর না হলেও যেতাম। আম্মু, খালামনি সহ আরও অনেক আত্মীয় বাড়িতে এসেছিল। সুতরাং মজা হওয়া স্বাভাবিক। সেই একই ভাবে খুলনা থেকে লঞ্চে করে যেয়ে মধুমতি নদীর ঘাটে ধলইতলা গ্রামে নামি। পরের দিন শুরু হল মিশন। মিশন মামার বিয়ে এবার দিতেই হবে।
আমার মামা আমার আম্মুর চাচাত ভাই হয়। তার বিয়ে নিয়ে এর আগেও কথা হয়েছিল কিন্তু মামাই রাজি হচ্ছিল না। তাই এবার জোর করেই দেব বলে সবাই ভেবেছে। আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামে আমরা মেয়ে দেখতে যাব ঠিক করলাম। আগে থেকেই ঠিক থাক করে রাখা হয়েছিল। এখন মুরুব্বিরা এসে দেখবে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে। সুতরাং পরের দিন আমরা সকাল সকাল মেয়ের বাড়ি মানে আমার মামী যিনি তার বাসায় গেলাম। বাসায় নানুকে একা রেখে সবাই গেলাম। আমরা যে গ্রামে গেলাম ওই গ্রামের নাম ইতনা। ইতনা বাজারের পাশেই.৩টি ভ্যান ঠিক করে আমরা গেলাম। সবাই অনেক মজা করতে করতে গেলাম। আর অনেক দিন পর শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে গ্রামে এসে আমিও অনেক আনন্দ করতে থাকি। আমি আর আমার দুই খালাত ভাই মিলে একটি মটরসাইকেলে যাই। আলাদা যাওয়ার কারনে আমরা যা খুশি করতে থাকি কেউ বাধা দেয় না। যেতে প্রায় ৩০ মিনিট লেগেছিল ভ্যানে। আর আমাদের কম। আমরা মটরসাইকেলে আগে আগে বাড়ির সামনে যাই আর বসে থাকি। মানে ভেতরে যাই না। লজ্জা করে। বুঝতেই তো পারছেন মুরুব্বিদের না নিয়ে কিভাবে যাই।
সবাই আসার ১০ মিনিট আগে আমরা পৌঁছে যাই। তারপর আমি আমার ভাই দুই জন মিলে এলাকার কিছু ছেলেদের সাথে গল্প করতে থাকি। আমার ভাই তাজ আর তমাল ভালোই জমিয়েছে এলাকার একটি ছেলের সাথে। তনময় তার নাম। স্কুলে যায় না। কাজ করে আর ঘুরে বেড়ায়। গ্রামের মানুষ যেমন হয় আর কি। তার বাবা কৃষক আর মা ভাল সেলাই করতে পারে। আশেপাশে কি কি আছে এই গ্রামে জানতে চাইলে সে জায়গাগুলি পরিচয় করিয়ে দেয়। এই গ্রামে একটি স্কুল আছে, একটি মাদ্রাসা আছে আর দুইটি মসজিদ আছে। পাশে একটি রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা দিয়ে সোজা চলে যাওয়া যায় খেয়াঘাটে। নৌকা পাড় হয়ে ওইপাড়ে গোপালগঞ্জ জেলা। যাই হোক দারুন।
তনময়কে আমাদের ধলইতলার কথা বললে আর কোথা থেকে এসেছি বললে সে চিনতে পারে। সে নাকি আমাদের গ্রামে আগেও এসেছে। যাই হোক ভালো লাগল।
আমাদের গ্রাম থেকে ইতনা চৌরাস্তা যেতে হয় প্রথমে তারপর বাজারে যাই আমরা। তার পাশেই মামির বাসা। যেখানে আমরা এসেছি আমাকে বিয়ে দেব বলে। ইতনা চৌরাস্তা আসার পথে একটি ব্রিজ পাড় হতে হয়। আর ব্রিজ থেকে একটু সামনে আছে একটি শ্মশান। আমি চিনি না শ্মশান। জানতামও না। তনময় বলল তাই জানলাম। তাজ আর তমাল শ্মশানের নাম শুনে একটু ভয় পেল।
সবাই এসে পড়ল মামির বাড়ি। মামাকে সুন্দর করে সাজিয়ে আনা হয়েছে। মামীর ভাই আর চাচা আরও অনেক আত্মীয়রা এসে আমাদের বাড়ির ভেতর নিয়ে গেল। সারা দিন ভালোই কাটল। বিকালে বাসায় আসি। মানে ধলইতলা আসি। আর তারপর আম্মু খালামনিরা মিলে আলোচনা করতে থাকে। মেয়ে সবারই পছন্দ হয়েছে। মামারও হয়েছে। কিন্তু মামার সেই একই কথা। এখন বিয়ে করবে না। আরও পরে করতে চায়। কথাটি এখন যেন কেউ কানেই তুলল না। বিয়ের দিন তারিখ পাকা করে চলে এসেছে সবাই। আগামি সপ্তাহে বিয়ে হবেই। দরকার হলে মামাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে বিয়ে দেবে। বিয়ে মামাকে দিয়েই ছাড়বে।
ওহ মামার নাম বলাই হয় নি। মামার নাম মামুন। বিকম পাশ। গ্রামে ব্যবসা করে তাই চাকরি করে না। মামা অনেক মজার ছিল। এই দুই দিন বাড়ি এসে মামার সাথে অনেক ঘুরেছিও। তো বিয়ের গুঞ্জন চলছে চারদিকে। মামাকে তাই একটুও ফাকা পাচ্ছি না। যাই হোক রাতে পুকুর ঘাটে মামাকে একা পাওয়া গেল। আমি, তমাল আর তাজ গেলাম মামার কাছে। তারপর শ্মশানের কথা জানতে চাইলাম। মামা দেখলাম খুব হাসতে থাকে। যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। মামা বলল আমাদের শ্মশানে দেখতে নিয়ে যাবে। আমরাও খুশি।
যাই হোক পরের দিন দিনে আমরা তিনজন মানে আমি তমাল আর তাজ মিলে গেলাম শ্মশানে দেখতে। দিনে ভয় থাকে না। তবে অদ্ভুত লাগল। অনেক পুরাতন শ্মশান। আশেপাশে কোন মানুষ নেই। শ্মশান থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে একটি ঘর দেখলাম। সেখানে মানুষ মাঝে মাঝে আসে। মানে গ্রামে যারা জমিতে কাজ করে তারা ওখানে আসে। আর ঘর বাড়ি মানে লোকালয় আরও দুরে। আমরা দেখলাম একটি মরা গরুর কঙ্কাল রয়েছে। আরও দেখলাম কিছু ছাই। ভেতরে গেলাম না ওইদিন বাইরে থেকে দেখলাম। ভেতরে যাওয়ার সাহস হয় নি। তারপর চলে আসি। বাড়ি থেকে যেতে প্রায় ৩০ মিনিট লাগে। হেটে গিয়েছিলাম তাই।আর ছিলাম প্রায় ২০ মিনিটের মতন। তারপর রাস্তায় এসে একটি ভ্যানে চলে আসি। মামাকে সেইদিন দুপুরে গোসলের সময় বলি আমাদের অভিযানের কথা।
মামা সব শুনল তারপর আগেরদিন রাতে মত হাসতে থাকে। আমাদের বলে যে এবার বিয়ে করবে মামা। আমরাও খুশি।
সো মহা ধুমধাম করে মামার বিয়ে হয়ে গেল। অনেক হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করে নাচতে থাকি। তারপর সন্ধ্যায় মামিকে নিয়ে বাড়িতে আসতে থাকি। মামা ইতনার ব্রিজের কাছাকাছি এসে এক কাণ্ড করে বসে। মামা ভ্যান থামিয়ে নিচে নামে। তারপর বলে যে তার নাকি বাথরুমে যেতে হবে।
আশেপাশে বাথ্রুম নেই। সবাই বাথ্রুম খুজতে থাকে। কাছাকাছি একটি বাড়ি দেখা যায়। দুরে, ভালোই দুরে। আমরা চাইলে ভ্যানে করে একটু এগিয়ে যেতে পারতাম। কেননা হেটে যেতে যত সময় লাগবে ততক্ষণে ধলইতলা এসে বাথরুমে যেতে পারত। কিন্তু না মামা ইতিমধ্যে অর্ধেক পথে চলে গেছে। নতুন জামাইয়ের কাণ্ড দেখে পিছু পিছু মামীর দুই ভাই যেতে থাকে। আমি, তাজ আর তমালও যেতে থাকি।
তারা কোথায় যাচ্ছেন জানেন? সেই শ্মশানের দিকে।
আমার আম্মু বা খালামনি এই শ্মশান চেনে না। শহরে থাকার কারনে আর গ্রামে কম আসার জন্য না চেনাই স্বাভাবিক। তো তারা ভ্যানে বসে থাকল। নতুন গ্রামে এসে মামীর পরিবারের কেউও চেনে না ঠিক মত। তাই তারাও কিছু জানে না শ্মশানের সম্পর্কে।
যাই হোক মামা এখন সেই বাড়িটির প্রায় কাছে। যে বাড়ির কথা বলেছিলাম একটু আগে। শ্মশানের পাশে ৫০০ মিটার দুরে। মামা ছুটে যাচ্ছে, মামার পিছু পিছু মামীর দুই ভাই ছুটছে। সেই দুই জনের নাম ফারুক আর মুনিম। দেখতে দেখতে আমরা প্রায় শ্মশানের কাছে চলে আসি। সন্ধ্যার সময় শ্মশান দেখতে খুব ভয়ানক। আশেপাশে কোন মানুষ নেই। আমি, তমাল আর তাজ ভাবলাম মামাকে ভুতে ধরেছে। হথাৎ মামা সেই বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি। মামির দুই ভাই ফারুক আর মুনিমও করছে। দূর থেকে আমরা আমাদের ভ্যান দেখতে লাগলাম। তবুও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। চারদিকে ইতিমধ্যে অন্ধকার হয়েছে। কিছু দেখা যাচ্ছে না। হথাৎ পেছন থেকে কে যেন আমার ঘাড়ে হাত দিল।
আমি পেছনে ফিরতেই আমার মুখ চেপে ধরে আমাকে নিয়ে গেল। ভয় পেলাম একটু। তারপর দেখি মামাই আমাকে এভাবে নিয়ে আসে। আমি দেখি তাজ আর তমালও আমাদের সাথে। বাকি রইল মামীর দুই ভাই। মামা এবার আমাদের প্লান বলল। দেখলাম পাশে কিছু জিনিস রাখা আছে। মামা এগুলি যাত্রার লোকদের কাছ থেকে ভাড়া করে এনেছে। তাজ আর তমাল পড়ে নিল। তারপর আমি আর মামা আগুন জ্বালালাম। এবার মেইন ইভেন্ট শুরু।
ফারুক আর মুনিম দাড়িয়ে। এবার মনে হল তারা ভয় পাচ্ছে। আমাদের না দেখে ভয় পাচ্ছে। হথাত একটি শব্দ হল। আকাশে একটি আতশবাজি মামা নিক্ষেপ করল। দেখলাম ফারুক আর মুনিম পিছনে তাকালো। এবার আগুন জ্বলে উঠল। বাংলা সিনেমার জীনের বাদশার মত তমাল ভুত আর তাজ ভুত সামনে আসলো। এবার তার দুইজন ভয় দেখিয়ে সামনের দিকে আসতে থাকে। তখন সেই দুইজন মানে ফারুক আর মুনিম ভয় পেলে পালাতে যায়।
নতুন জায়গা তারা কিছু চেনে না। অন্ধকারে ভুল করে শ্মশানের ভেতরে তারা চলে গেল। কেল্লাফতে মামার মিশন যেন কমপ্লিট। এবার তমাল আর তাজ তাদের শ্মশানের কাছে আসলো। শ্মশানের ভেতর আগুন জ্বালালো মামা। যেন হথাৎ শ্মশানের এক কোণে আগুন জ্বলে উঠেছে। খুব ভয় পাচ্ছে তারা দুইজন। এবার খেলা শেষ করতে হবে। কারন সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এমনিতে অনেক সময় লস হয়েছে। ততক্ষণে মামার বাথ্রুম শেষ হওয়ার কথা। তাই হথাৎ আগুন অফ হয়। তারপর সামনের ভুত দুইটি দাড়িয়ে আর মামা কিছু বাজি ফুটাতে থাকে। যেন ভুতের মাধ্যমে খেলা হচ্ছে। তারা ভয় পাচ্ছে। খুব ভয় পেল।
তারপর তাদের দুইজনের সামনে সেই মৃত গরুর কঙ্কাল ছুড়ে মারা হল। তারপর ভুত দুইটি উধাও, ভুত দুইটি আস্তে আস্তে পিছিয়ে আসলো।তবে বাজি গুলি সামনে পড়তে থাকে তাদের তাই তারা আর ভুতের পিছন পিছন আসে নি। আমরা খুব জলদি চেঞ্জ হয়ে নিলাম।
একটি টর্চের আলো আসলো। ফারুক আর মুনিম ভাবলো আবার ভুত। তারপর মামার গলা শুনা গেল। মামা ডাকছে তার শ্যালকদের। তারা একটু সাহস পেল আর আমাদের কাছে আসলো।
আমরা তাদের নিয়ে আসি ভ্যানে করে তারপর বাড়ি যাই।
সেদিন রাত থেকে ফারুকের আর পরের দিন সকাল থেকে মুনিমের প্রচণ্ড জ্বর। যেন ভয় পেয়েছে খুব তারা। প্রায় ৩ দিন হয়ে গেছে তারপরও জ্বর যায় নি। পরে মসজিদের হুজুরের কাছ থেকে দুয়া, পানি পড়া ো ঝাড়ফুঁক করার পর তাদের জ্বর গেল।
তারপর ওই যে তারা গেল চলে আর আসে নি মামীর শ্বশুরবাড়ি দেখতে
আমার মামা আমার আম্মুর চাচাত ভাই হয়। তার বিয়ে নিয়ে এর আগেও কথা হয়েছিল কিন্তু মামাই রাজি হচ্ছিল না। তাই এবার জোর করেই দেব বলে সবাই ভেবেছে। আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামে আমরা মেয়ে দেখতে যাব ঠিক করলাম। আগে থেকেই ঠিক থাক করে রাখা হয়েছিল। এখন মুরুব্বিরা এসে দেখবে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে। সুতরাং পরের দিন আমরা সকাল সকাল মেয়ের বাড়ি মানে আমার মামী যিনি তার বাসায় গেলাম। বাসায় নানুকে একা রেখে সবাই গেলাম। আমরা যে গ্রামে গেলাম ওই গ্রামের নাম ইতনা। ইতনা বাজারের পাশেই.৩টি ভ্যান ঠিক করে আমরা গেলাম। সবাই অনেক মজা করতে করতে গেলাম। আর অনেক দিন পর শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে গ্রামে এসে আমিও অনেক আনন্দ করতে থাকি। আমি আর আমার দুই খালাত ভাই মিলে একটি মটরসাইকেলে যাই। আলাদা যাওয়ার কারনে আমরা যা খুশি করতে থাকি কেউ বাধা দেয় না। যেতে প্রায় ৩০ মিনিট লেগেছিল ভ্যানে। আর আমাদের কম। আমরা মটরসাইকেলে আগে আগে বাড়ির সামনে যাই আর বসে থাকি। মানে ভেতরে যাই না। লজ্জা করে। বুঝতেই তো পারছেন মুরুব্বিদের না নিয়ে কিভাবে যাই।
সবাই আসার ১০ মিনিট আগে আমরা পৌঁছে যাই। তারপর আমি আমার ভাই দুই জন মিলে এলাকার কিছু ছেলেদের সাথে গল্প করতে থাকি। আমার ভাই তাজ আর তমাল ভালোই জমিয়েছে এলাকার একটি ছেলের সাথে। তনময় তার নাম। স্কুলে যায় না। কাজ করে আর ঘুরে বেড়ায়। গ্রামের মানুষ যেমন হয় আর কি। তার বাবা কৃষক আর মা ভাল সেলাই করতে পারে। আশেপাশে কি কি আছে এই গ্রামে জানতে চাইলে সে জায়গাগুলি পরিচয় করিয়ে দেয়। এই গ্রামে একটি স্কুল আছে, একটি মাদ্রাসা আছে আর দুইটি মসজিদ আছে। পাশে একটি রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা দিয়ে সোজা চলে যাওয়া যায় খেয়াঘাটে। নৌকা পাড় হয়ে ওইপাড়ে গোপালগঞ্জ জেলা। যাই হোক দারুন।
তনময়কে আমাদের ধলইতলার কথা বললে আর কোথা থেকে এসেছি বললে সে চিনতে পারে। সে নাকি আমাদের গ্রামে আগেও এসেছে। যাই হোক ভালো লাগল।
আমাদের গ্রাম থেকে ইতনা চৌরাস্তা যেতে হয় প্রথমে তারপর বাজারে যাই আমরা। তার পাশেই মামির বাসা। যেখানে আমরা এসেছি আমাকে বিয়ে দেব বলে। ইতনা চৌরাস্তা আসার পথে একটি ব্রিজ পাড় হতে হয়। আর ব্রিজ থেকে একটু সামনে আছে একটি শ্মশান। আমি চিনি না শ্মশান। জানতামও না। তনময় বলল তাই জানলাম। তাজ আর তমাল শ্মশানের নাম শুনে একটু ভয় পেল।
সবাই এসে পড়ল মামির বাড়ি। মামাকে সুন্দর করে সাজিয়ে আনা হয়েছে। মামীর ভাই আর চাচা আরও অনেক আত্মীয়রা এসে আমাদের বাড়ির ভেতর নিয়ে গেল। সারা দিন ভালোই কাটল। বিকালে বাসায় আসি। মানে ধলইতলা আসি। আর তারপর আম্মু খালামনিরা মিলে আলোচনা করতে থাকে। মেয়ে সবারই পছন্দ হয়েছে। মামারও হয়েছে। কিন্তু মামার সেই একই কথা। এখন বিয়ে করবে না। আরও পরে করতে চায়। কথাটি এখন যেন কেউ কানেই তুলল না। বিয়ের দিন তারিখ পাকা করে চলে এসেছে সবাই। আগামি সপ্তাহে বিয়ে হবেই। দরকার হলে মামাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে বিয়ে দেবে। বিয়ে মামাকে দিয়েই ছাড়বে।
ওহ মামার নাম বলাই হয় নি। মামার নাম মামুন। বিকম পাশ। গ্রামে ব্যবসা করে তাই চাকরি করে না। মামা অনেক মজার ছিল। এই দুই দিন বাড়ি এসে মামার সাথে অনেক ঘুরেছিও। তো বিয়ের গুঞ্জন চলছে চারদিকে। মামাকে তাই একটুও ফাকা পাচ্ছি না। যাই হোক রাতে পুকুর ঘাটে মামাকে একা পাওয়া গেল। আমি, তমাল আর তাজ গেলাম মামার কাছে। তারপর শ্মশানের কথা জানতে চাইলাম। মামা দেখলাম খুব হাসতে থাকে। যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। মামা বলল আমাদের শ্মশানে দেখতে নিয়ে যাবে। আমরাও খুশি।
যাই হোক পরের দিন দিনে আমরা তিনজন মানে আমি তমাল আর তাজ মিলে গেলাম শ্মশানে দেখতে। দিনে ভয় থাকে না। তবে অদ্ভুত লাগল। অনেক পুরাতন শ্মশান। আশেপাশে কোন মানুষ নেই। শ্মশান থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে একটি ঘর দেখলাম। সেখানে মানুষ মাঝে মাঝে আসে। মানে গ্রামে যারা জমিতে কাজ করে তারা ওখানে আসে। আর ঘর বাড়ি মানে লোকালয় আরও দুরে। আমরা দেখলাম একটি মরা গরুর কঙ্কাল রয়েছে। আরও দেখলাম কিছু ছাই। ভেতরে গেলাম না ওইদিন বাইরে থেকে দেখলাম। ভেতরে যাওয়ার সাহস হয় নি। তারপর চলে আসি। বাড়ি থেকে যেতে প্রায় ৩০ মিনিট লাগে। হেটে গিয়েছিলাম তাই।আর ছিলাম প্রায় ২০ মিনিটের মতন। তারপর রাস্তায় এসে একটি ভ্যানে চলে আসি। মামাকে সেইদিন দুপুরে গোসলের সময় বলি আমাদের অভিযানের কথা।
মামা সব শুনল তারপর আগেরদিন রাতে মত হাসতে থাকে। আমাদের বলে যে এবার বিয়ে করবে মামা। আমরাও খুশি।
সো মহা ধুমধাম করে মামার বিয়ে হয়ে গেল। অনেক হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করে নাচতে থাকি। তারপর সন্ধ্যায় মামিকে নিয়ে বাড়িতে আসতে থাকি। মামা ইতনার ব্রিজের কাছাকাছি এসে এক কাণ্ড করে বসে। মামা ভ্যান থামিয়ে নিচে নামে। তারপর বলে যে তার নাকি বাথরুমে যেতে হবে।
আশেপাশে বাথ্রুম নেই। সবাই বাথ্রুম খুজতে থাকে। কাছাকাছি একটি বাড়ি দেখা যায়। দুরে, ভালোই দুরে। আমরা চাইলে ভ্যানে করে একটু এগিয়ে যেতে পারতাম। কেননা হেটে যেতে যত সময় লাগবে ততক্ষণে ধলইতলা এসে বাথরুমে যেতে পারত। কিন্তু না মামা ইতিমধ্যে অর্ধেক পথে চলে গেছে। নতুন জামাইয়ের কাণ্ড দেখে পিছু পিছু মামীর দুই ভাই যেতে থাকে। আমি, তাজ আর তমালও যেতে থাকি।
তারা কোথায় যাচ্ছেন জানেন? সেই শ্মশানের দিকে।
আমার আম্মু বা খালামনি এই শ্মশান চেনে না। শহরে থাকার কারনে আর গ্রামে কম আসার জন্য না চেনাই স্বাভাবিক। তো তারা ভ্যানে বসে থাকল। নতুন গ্রামে এসে মামীর পরিবারের কেউও চেনে না ঠিক মত। তাই তারাও কিছু জানে না শ্মশানের সম্পর্কে।
যাই হোক মামা এখন সেই বাড়িটির প্রায় কাছে। যে বাড়ির কথা বলেছিলাম একটু আগে। শ্মশানের পাশে ৫০০ মিটার দুরে। মামা ছুটে যাচ্ছে, মামার পিছু পিছু মামীর দুই ভাই ছুটছে। সেই দুই জনের নাম ফারুক আর মুনিম। দেখতে দেখতে আমরা প্রায় শ্মশানের কাছে চলে আসি। সন্ধ্যার সময় শ্মশান দেখতে খুব ভয়ানক। আশেপাশে কোন মানুষ নেই। আমি, তমাল আর তাজ ভাবলাম মামাকে ভুতে ধরেছে। হথাৎ মামা সেই বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি। মামির দুই ভাই ফারুক আর মুনিমও করছে। দূর থেকে আমরা আমাদের ভ্যান দেখতে লাগলাম। তবুও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। চারদিকে ইতিমধ্যে অন্ধকার হয়েছে। কিছু দেখা যাচ্ছে না। হথাৎ পেছন থেকে কে যেন আমার ঘাড়ে হাত দিল।
আমি পেছনে ফিরতেই আমার মুখ চেপে ধরে আমাকে নিয়ে গেল। ভয় পেলাম একটু। তারপর দেখি মামাই আমাকে এভাবে নিয়ে আসে। আমি দেখি তাজ আর তমালও আমাদের সাথে। বাকি রইল মামীর দুই ভাই। মামা এবার আমাদের প্লান বলল। দেখলাম পাশে কিছু জিনিস রাখা আছে। মামা এগুলি যাত্রার লোকদের কাছ থেকে ভাড়া করে এনেছে। তাজ আর তমাল পড়ে নিল। তারপর আমি আর মামা আগুন জ্বালালাম। এবার মেইন ইভেন্ট শুরু।
ফারুক আর মুনিম দাড়িয়ে। এবার মনে হল তারা ভয় পাচ্ছে। আমাদের না দেখে ভয় পাচ্ছে। হথাত একটি শব্দ হল। আকাশে একটি আতশবাজি মামা নিক্ষেপ করল। দেখলাম ফারুক আর মুনিম পিছনে তাকালো। এবার আগুন জ্বলে উঠল। বাংলা সিনেমার জীনের বাদশার মত তমাল ভুত আর তাজ ভুত সামনে আসলো। এবার তার দুইজন ভয় দেখিয়ে সামনের দিকে আসতে থাকে। তখন সেই দুইজন মানে ফারুক আর মুনিম ভয় পেলে পালাতে যায়।
নতুন জায়গা তারা কিছু চেনে না। অন্ধকারে ভুল করে শ্মশানের ভেতরে তারা চলে গেল। কেল্লাফতে মামার মিশন যেন কমপ্লিট। এবার তমাল আর তাজ তাদের শ্মশানের কাছে আসলো। শ্মশানের ভেতর আগুন জ্বালালো মামা। যেন হথাৎ শ্মশানের এক কোণে আগুন জ্বলে উঠেছে। খুব ভয় পাচ্ছে তারা দুইজন। এবার খেলা শেষ করতে হবে। কারন সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এমনিতে অনেক সময় লস হয়েছে। ততক্ষণে মামার বাথ্রুম শেষ হওয়ার কথা। তাই হথাৎ আগুন অফ হয়। তারপর সামনের ভুত দুইটি দাড়িয়ে আর মামা কিছু বাজি ফুটাতে থাকে। যেন ভুতের মাধ্যমে খেলা হচ্ছে। তারা ভয় পাচ্ছে। খুব ভয় পেল।
তারপর তাদের দুইজনের সামনে সেই মৃত গরুর কঙ্কাল ছুড়ে মারা হল। তারপর ভুত দুইটি উধাও, ভুত দুইটি আস্তে আস্তে পিছিয়ে আসলো।তবে বাজি গুলি সামনে পড়তে থাকে তাদের তাই তারা আর ভুতের পিছন পিছন আসে নি। আমরা খুব জলদি চেঞ্জ হয়ে নিলাম।
একটি টর্চের আলো আসলো। ফারুক আর মুনিম ভাবলো আবার ভুত। তারপর মামার গলা শুনা গেল। মামা ডাকছে তার শ্যালকদের। তারা একটু সাহস পেল আর আমাদের কাছে আসলো।
আমরা তাদের নিয়ে আসি ভ্যানে করে তারপর বাড়ি যাই।
সেদিন রাত থেকে ফারুকের আর পরের দিন সকাল থেকে মুনিমের প্রচণ্ড জ্বর। যেন ভয় পেয়েছে খুব তারা। প্রায় ৩ দিন হয়ে গেছে তারপরও জ্বর যায় নি। পরে মসজিদের হুজুরের কাছ থেকে দুয়া, পানি পড়া ো ঝাড়ফুঁক করার পর তাদের জ্বর গেল।
তারপর ওই যে তারা গেল চলে আর আসে নি মামীর শ্বশুরবাড়ি দেখতে
No comments:
Post a Comment