Sunday, May 12, 2019

গরমের দিনে ধলইতলা গ্রাম ও মধুমতী নদীর গল্প

অনেক গরম আর আমাদের চামড়া পুড়ছে তাবে। মাঝে মাঝে শরীর কাপে। থামাও কেউ থামাও। চারিদিকে হাহাকার অনেক গরম পড়েছে আজ। ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা আমাদের নড়াইল জেলাতে আজ। আমাদের গ্রামের অনেক কৃষক এই গরমে খুব কষ্ট করে কৃষি কাজ করতে গেছে মাঠে। কি আর করার এরা এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
আমার অনেক পরিচিত তারা। তাদের কষ্ট দেখলে আমার নিজেরই খারাপ লাগে। তবে একটি জিনিস হল তারা আমাদের থেকে অনেক শক্তিশালী। কেন জানেন তারা আমাদের থেকে অনেক বেশি পরিশ্রম করে। আমরা তো একটু গরমেই টিকতে পারি না আর তারা সারাদিন মাঠে থাকে। দুপুরে এসে গোছল করে আবার চলে যায়। আর সকালে তো গোছল আছেই। গ্রামে এই এক সুবিধা। তিন বেলাও গোছল করে অনেকে। সকালে যাওয়ার সময়, দুপুরে আর বিকালে ফিরে এসে গোছল করে তারা। আমি দেখেছি অনেককে কলের ঠাণ্ডা পানিও ইউজ করে গোছল করতে। তারা কেউ কেউ বল সাবান ইউজ করে। বল সাবান মাথায় দিলে নাকি সব গরম উঠে যায়। হ্যাঁ আমিও নিয়েছি ভালোই লাগে। গরমে মাথার যন্ত্রণাটি কমে যায়। কিন্তু চুলের বারোটা বাজে। গ্রামের মানুষ অতটা বোঝে না। তারা এটা নিয়ে শান্তি পায় গরমে। গরমে আরও একটি কাজ করে তারা। সেটা হল মাঠে একধরনের ছোট ঘর বানিয়ে সেখানে দুপুরে তারা রেস্ট নেয় আর খাওয়াদাওয়া করে। এমনিতেই গ্রামে অনেক খোলামেলা আর বাতাসও অনেক। প্রকৃতি অনেক স্বাস্থ্যকর আর ভালো। তবে তীব্র গরমে মাঝে মাঝে বাতাসও অফ থাকে। এতে সবাই মোটামুটি ভালোই কষ্ট পায়। আমি লাইফে বহুবার গ্রামে গেছি। অনেক কিছু দেখেছি ও শিখেছি। সেখানের মানুষ গুলি অনেক ভালো ও অনেক আপন। তাদের সবার ভেতর এক ধরনের মায়া কাজ করে। একজনের কিছু হলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় ছুটে আসে সকল গ্রামবাসী আর সেটি দেখতেও খুব ভালো লাগে। গরমে অন্যতম একটি সমস্যা হল আগুন ধরা। ধলইতলা গ্রামে প্রায়ই আগুন ধরে। একটি সিগারেট ফেললেও সেখান থেকে ধরতে পারে। কারন সব কিছু গরমে শুকিয়ে যায়। গ্রামের মানুষ রাস্তায় বাড়ির উঠানে খেড় বিছিয়ে দেয় আর মাঝে মাঝে সেখানেও আগুন ধরে। মাঝে মাঝে রাতে শুনা যায় অমুক বাড়ি আগুন ধরেছে। তখন সারা গ্রামবাসী এসে তাদের বাচার। আর সবচেয়ে মজার বেপার হল সবার হাতে একটি করে বালতি থাকে আর বালতি ভর্তি পানি নিয়ে সবাই এসে একে একে পানি ঢেলে দিয়ে আগুন নিভাতে সাহায্য করে। কি সুন্দর তাই না। এমন সুন্দর গ্রাম আর কোথায় আছে। নড়াইলে এই গ্রামের অনেক সুনাম আছে। আর  ধলইতলা এমন একটি গ্রাম যে গ্রামে অন্য কোন ধর্মের লোক নেই। সবাই একই ধর্মেই। সবাই মুসলিম। আর এই জন্য আমার এত্ত ভালো লাগে এই গ্রামটি। যখন উৎসব হয় সবাই একসাথে গ্রামে আনন্দ করে আর মজা করে। ভালো লাগে এগুলি সবারই। হয়ত অনেকে হিংসে করে আমাদের গ্রামের এই ভালোবাসা দেখে। হওয়াটা স্বাভাবিক তাই না। এই গ্রামে গরমের সময় আগে অনেক সমস্যা হত, কিন্তু কারেন্ট আসাতে এই সমস্যা কমেছে। অনেক বছর হল কারেন্ট এসেছে গ্রামে। গরমের দিনে ভালো লাগে পাশের মধুমতি নদীতে গোছল করতে। বিকালে ফুটবল খেলার পর সবাই একত্রে ঝাপিয়ে পড়ি সেই নদীতে আর অনেক্ষন ধরে ঝাপাতে থাকি। নদীর পানি খুব ভালো লাগে। তারপর আমরা একে একে ফিরি যার যার বাড়ি। আর আসার পথে রাস্তা ভরে হৈচৈ করতে করতে আসি। সামনে যতগুলি ঘরবাড়ী দেখা যায় সব গুলির সামনে ডাকাডাকি করতে করতে আসি। মাঝে মাঝে রাতে যখন কারেন্ট চলে যায় তখন বাইরে উঠানে এসে বাতাস খেতে থাকি। গরমের দিন মাঝে মাঝে সবাই গভীর রাতে বাইরে বের হয়ে হাঁটাচলা করতে থাকি। অনেক মজা হয়। হাতের কাছে মুড়ি, খই থাকলে চাবাতে চাবাতে হাঁটতে থাকি আমরা। গরমের সময় ভালো লাগে মৌসুমি ফলগুলি খেতে। আর ডাব গাছ থেকে পেড়ে খাই আমরা। ডাবের পানি কে না পছন্দ করে। এটির অনেক উপকার। শরীর ভালো রাখে আর অসুখ দূর করে। যাই হোক গরমে গ্রামীণ লাইফে অনেক ভালোই লাগে। অনেক গরমে কষ্ট হয়। আর ভালো লাগে গরমের দিনে নদীতে যেতে। আজ এই পর্যন্ত। আগামীতে আরও লিখব এই গ্রাম নিয়ে।

No comments:

Post a Comment