তখন আমি ক্লাস ৬য়ে পড়ি। খুলনা আমাদের বাসা। সেইবার গরমের ছুটিতে গ্রামের বাসায় যাওয়ার প্লান করি। ফারুক মামাকে মোবাইল করে আসতে বলি। মামা পরের দিন আমাকে নিতে আসে। তারপর আমি মা আর মামা তিনজন মিলে যাওয়ার প্লান করি। নদী মাতৃক দেশ আমাদের বাংলাদেশ। তাই লঞ্চে করে যাওয়ার জন্য মামা আসার দিন একটি টিকেট বুকিং করে এসেছিলেন। খুলনার রূপসা নদীর লঞ্চঘাটে আমরা যথারীতি সকালে খুব ভোরে পৌছাই। ২ তলা লঞ্চ। ভালোই বড়। আমার লঞ্চে যেতে ভালো লাগে তাই মামা আমার জন্য নদী পথে যাওয়ার সুযোগ করে দিল। মামা আসলেই শুধু লঞ্চে করে যাই। যদিও অন্য পথে যাওয়া যায় গ্রামের বাড়ি। বাসে একবার গিয়েছিলাম। লঞ্চে গ্রামের বাড়ি যেতে আমার প্রায় দিনের অর্ধেক সময় লাগে। যেমন সকালে রওনা দিলে দুপুরে যাই। খুব ভোরে যাত্রা শুরু করলে অবশ্য বেলা উঠতে উঠতে পৌঁছে যাই। যাই হোক আমরা যাত্রা শুরু করলাম। বাড়ি পৌছালাম দুপুরে।
ধলইতলা গ্রাম। সেখানে লঞ্চ থামল। আমরা নামলাম। আমি তো মহা খুশি। ইতিমধ্যে দেখলাম আমার কিছু গ্রামের ভাই আর বন্ধুরা লঞ্চ দেখতে এসেছে। আমাকে দেখে তারা এগিয়ে আসলো। আমিও তাদের দেখে একটি দৌর দিলাম। মামা ভ্যান ঠিক করল। আমরা বাড়ি গেলাম। আমাকে দেখে নানু, মামী অনেক খুশি। তারপর দুপুরে খেয়ে সবাই রেস্ট নিল। আমি গ্রামে এসেছি এখন কি আর রেস্ট নেওয়ার সময়। চলে গেলাম এক দৌরে খেলতে। ক্রিকেট ফুটবল সব খেললাম। আসার সময় দেখলাম আশেপাশের গাছে অনেক আম ধরেছে।
ধলইতলা গ্রাম। সেখানে লঞ্চ থামল। আমরা নামলাম। আমি তো মহা খুশি। ইতিমধ্যে দেখলাম আমার কিছু গ্রামের ভাই আর বন্ধুরা লঞ্চ দেখতে এসেছে। আমাকে দেখে তারা এগিয়ে আসলো। আমিও তাদের দেখে একটি দৌর দিলাম। মামা ভ্যান ঠিক করল। আমরা বাড়ি গেলাম। আমাকে দেখে নানু, মামী অনেক খুশি। তারপর দুপুরে খেয়ে সবাই রেস্ট নিল। আমি গ্রামে এসেছি এখন কি আর রেস্ট নেওয়ার সময়। চলে গেলাম এক দৌরে খেলতে। ক্রিকেট ফুটবল সব খেললাম। আসার সময় দেখলাম আশেপাশের গাছে অনেক আম ধরেছে।
কাচা আম এই সিজনে খেতে খুব মজা। সেই টেস্ট। মামা সেই দিন আমাদের কাচা আম খেতে দিলেন। উঠানে বড় একটি আম গাছ। ভালোই খেতে। অনেক মজা করে খেলাম।
আমাদের বাড়ির পাশের বাড়ি মামুন গাজির বাড়ি। মামা ফারুক গাজির সাথে মাঝে মাঝে দেখি অনেক গল্প করেন মামুন গাজি। তবে দেখে বুঝলাম অনেক পাজি। তার বাসায় অনেক গুলি আম গাছ। সেদিন দেখলাম কতগুলি পেকেছে। আমাদের উঠানের গাছে পাকার এখনো অনেক দেরি আছে। তাই কি করা যায়। ভাবলাম পেড়ে খাব। গ্রামের বন্ধুদের দেকে কথাটি বললাম।
ওহ বলা হয় নি। আমার গ্রামে ৩ জন বন্ধুর নাম হল মুনিম, সাকিব আর সিপন। মামুনের একটি ছেলে আছে। নাম পরাগ। সে তো তার বাবা থেকেও খারাপ। সেদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম আমাকে ভয় দেখাল।
পরের দিন সকালে বন্ধুরা মিলে প্লান করতে থাকি মামুনের গাছে আম চুরি করার।
আমিঃ "জানিস আজ পরাগদের গাছে অনেক গুলা পাকা আম দেখলাম"
মুনিমঃ "দেখে কি লাভ! ওর বাবাকে চিনিস না। খুব খারাপ। রাস্তার সামনে দেখলেই বলে আম চুরি করতে এসেছি কি না"
সাকিবঃ আমারে সেদিন খুব ধমক দিছিলো। আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। কে যেন তখন তার টিনের চালে ঢিল মারে। আমি নাকি আম পাড়তে ঢিল মারি। খুব বকা দিল আমাকে"
আমিঃ "মামার সাথে তো ভালোই ভাব দেখি"
সিপনঃ "তাহলে তুই বলে দেখ হয়ত তোকে আম খেতে দিতেও পারে"
আমিঃ "না ভাই। দরকার নাই। গতকাল আমার সাথে তার ছেলের ঝগড়া হয়েছিল।"
সাকিবঃ "যেমন ছেলে তেমন বাপ"
আমিঃ "কি করা যায় বল তো"
সিপনঃ "চল আজ রাতে একটু চেষ্টা করি।"
মুনিমঃ "তোমরা জানো না, মামুন তার মাছ পাহারা দেয় সারা রাত। ঘুমালে তো আম পাড়তে যাব নাকি?"
সিপনঃ "অন্ধকারে কিছু হবে না। এসব আগে অনেক করেছি।"
মুনিমঃ "তাহলে তোরা যা আমি তোদের সাথে নেই"
এই বলে মুনিম চলে গেল। কি আর করার আমি সিপন আর সাকিব মিলে চুরির প্লান করি।
ওইদিন দুপুরে আমার মধুমতি নদীর ইলিশ দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম। মামা সকালে বাজার থেকে সবচেয়ে বড় ইলিশ মাছ কিনে এনেছিলেন। আমের টক তৈরি করেছিলেন মামি। অসাধারন খেতে। কাচা আমের টক। ভাবলে এখনো জিভে জল চলে আসে।
আমার গ্রামের বাড়ি কোন কিছুর অভাব নেই। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, ডালিম, আতা ইত্যাদি ছাড়াও নাম না জানা অনেক মৌসুমি ফল পাওয়া যায়। সারা বছর থাকতে পারলে অভাব হবে না।
রাতে ভাত খাওয়ার পর মামার গোয়ালের গাইয়ের দুধ খেয়ে বের হলাম। বন্ধুরা সবাই আসলো। শুধু আসলো না মুনিম। আমি একটু ভিতু। আমাদের ভেতর সব চেয়ে সাহসি সাকিব। সে আমাদের নিয়ে গেল। তখন বুঝতে পারলাম মামুন তার পুকুরে মাছ পাহারা দিচ্ছে। আমরাও আম পাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন।
আমরা সবাই একটি ছুরি নিয়ে এসেছি। আমি একটি ব্যাগ ও ঝুড়ি এনেছি। সিপন এনেছে একটি দা আর সাকিব একটি টচ ও দড়ি নিয়ে এসেছে।
আমরা চুপি চুপি মানুনদের বাসার পিছনে গেলাম। মনে হল সামনের বাড়ি কেউ ঘুমাচ্ছে। যে গাছটিতে আমি দেখেছিলাম সেটি আমাদের থেকে প্রায় ২০ হাত দূরে। ওই দিন ছিল আমাবস্যা। কিছু দেখা যাচ্ছিল না। আমরাও এটিও চাই যেন কেউ না বুঝতে পারুক। সাকিব গাছে উঠতে গেল। আমি আর সিপন নিচে। একটু পর সাকিব সিপনকে ডাকল। সে উঠে গেল ঝুড়ি নিয়ে। আমি নিচে একা। খুব ভয় করছে। দড়ি দিয়ে সাকিব ঝুড়িটি নিচে দিল। এক ঝুড়ি পাকা আমি আমার মনটা আনন্দে ভরে গেল। ব্যাগে রেখে সব আমি তাদের সিগন্যাল দিলাম। তারা আবার পাড়তে লাগল।
আরেক ঝুড়ি এভাবে ব্যাগে রাখলাম। প্রায় দুই আর দুই মিলে চার কেজি হয়েছে আম। মামুন এখনো বোধ হয় কিছু বুঝতে পারে নি। আমি ইতিমধ্যে ২টি আম খেয়ে ফেলি। আম চুরি হচ্ছে কিন্তু মামুন জানে না।
আমরা যে গাছের আম পারছিলাম সেই গাছটি মামুনদের বাড়ির টিনের চালের উপরে। মানে একটু ভুল করলেই টিনের চালে শব্দ হবে। আর যেখানে পড়বে সেই রুমে মামুনের ছেলে পরাগ থাকে।
এখন আম পাড়া প্রায় শেষের দিকে। সাকিব নেমে আসতে চাইল, গাছে থাকল সিপন। তখনি ঘটল একটি কাণ্ড। অন্ধকারে ডালে পা দেওয়াতে ডাল ভেঙ্গে গেল। সাকিবের যদিও কিছু হল না কিন্তু সমস্যা হল একটি। ডালটি টিনের চালের উপরে পড়ল।
"কে কে ওখানে" চিৎকার দিল পরাগ।
পুকুর পাড় থেকে মামুন লাইট মারছিল দেখলাম। আমি দিলাম এক দৌর। পড়ে রইল সাকিব আর সিপন। সাকিব নিচে যখন নামলো তখন মামুম লাইট মারতে মারতে চলে আসে কাছাকাছি। মামুনের ছেলে পরাগও ইতিমধ্যে বাইরে আসে। এমন সময় সাকিব পালাতে গেল। যেন মামুন আর পরাগের সামনে পড়েছে। ওদিকে সিপন নামতে যেয়ে ডাল ভেঙ্গে পড়লো সাকিবের ঘাড়ে। ব্যাস তাকে ধরে ফেলল মামুন আর পরাগ। সাকিব কোন রকম পালিয়ে এসে দূর থেকে দেখছে সব।
কি হবে কি করে বাচাব আমরা সিপনকে সেই কথা ভাবছি। এদিকে সিপন একটি কাজ করল। তার মুখ দেখার আগেই পাশে রাখা একটি হাড়ি থেকে মুখে কালি মাখল। ফলে কেউ তাকে চিনতে পারল না।
মামুনের টর্চের আলোয় দেখলাম তার মুখ। বুঝলাম আপাতত সে হয়ত বেঁচে গেল কিন্তু পালিয়ে না আসতে পারলে তাকে আর বাঁচানো যাবে না।
আমি আর সাকিব যখন খুব টেনশনে তখন পুকুর পাড়ে বিশাল ২ ৩ টা আওয়াজ হল। অনেকটা বাজি ফুটার মতন। এমন শব্দ এত রাতে শুনে মামুন দিল পুকুর পাড়ের দিকে দৌর। তখন পরাগ একা ধরে আছে সিপনকে। এখন আমাদের একটু সাহস হল। কাছে গেলাম। মনে হল পরাগের পিছনে কি যেন পুড়ছে। তারপর শব্দ হল। পরাগ দিল দৌর ভয়ে। তখন আমি আর সাকিব সিপনকে সাথে নিয়ে বাইরে চলে আসি। এমন সময় মুনিমকে দেখলাম। ও কোথা থেকে যেন এসেছে। মুনিমকে দেখে কাহিনি বুঝতে বাকি রইল না। আমরা অনেক আনন্দ পেলাম। সবাই ছুটে গেলাম লঞ্চঘাটে। মুনিমের হাতে আরও ৫ টি বাজি ছিল। ৪ টি সেখানে ফুটালাম আর আম খেলাম। বাকি একটি বাসায় ঢুকার সময় মামুনের টিনের চালে মেরে দিয়ে আসলাম। কিছুক্ষণ পর পরাগের চিৎকার শুনলাম। মামুন আর পরাগ আবার বাইরে। আমি ঘুমালাম।
সকালে উঠেলাম চেঁচামেচি শুনে। কি হয়েছে দেখতে গেলাম। দেখলাম পাশের বাড়ি থেকে অর্থাৎ মামুনদের বাসা থেকে আসতেছে। রাতে নাকি চোর এসে আম পেরে নিয়ে গেছে। আর ভুত দেখে পরাগের জ্বর এসেছে। যাই হোক সারাদিন পরাগ ভাইয়ার পাশে থাকলাম। সেবা যত্ন করলাম একটু। যার গাছের আম খেলাম তাকে একটু যত্ন করা যেতেই পারে।
সকালে উঠেলাম চেঁচামেচি শুনে। কি হয়েছে দেখতে গেলাম। দেখলাম পাশের বাড়ি থেকে অর্থাৎ মামুনদের বাসা থেকে আসতেছে। রাতে নাকি চোর এসে আম পেরে নিয়ে গেছে। আর ভুত দেখে পরাগের জ্বর এসেছে। যাই হোক সারাদিন পরাগ ভাইয়ার পাশে থাকলাম। সেবা যত্ন করলাম একটু। যার গাছের আম খেলাম তাকে একটু যত্ন করা যেতেই পারে।
যাই হোক ছুটি শেষে আসার দিন মামার কানে কানে আমার আম চুরির কথা বললাম। মামা আর মামী দুজনে খুব হাসলেন আমার কথা শুনে। আর ইতিমধ্যে আমাদের গাছের আমও পেকে গেছে। আমার জন্য এক ব্যাগ পাকা আমি দিয়ে লঞ্চে উঠিয়ে দিলেন।
[গল্পটি কাল্পনিক]
No comments:
Post a Comment