আজ একটু বেশি গরম পড়েছে। প্রায় ৪১ ডিগ্রি। হয়ত এটাই আজকের রেকর্ড তাপমাত্রা। না শুনলাম ৪২ ডিগ্রি হয়েছে রাজশাহীতে। এমনিতেই গরম খুব তারপর এত তাপমাত্রা আমাদের অসুস্থ করে তুলছে। হয়ত কাল খবরের পাতায় দেখব গরমে অনেক মানুষ মারা গেছে। আজকের দুপুরটা অনেক গরম আর বাতাস খুব গরম। ফ্যানের বাতাস। বাইরের বাতাসও ভালোই গরম। অসহ্য লাগছে সবার। আমি বাবা মা আর ছোটভাই এই চারজন মিলে থাকি চুয়াডাঙ্গা শহরে। আমাদের বাসার উপরে ছাদ আর সোজা গরম সবটুকু আসে আমাদের কাছে। সারা বাসায় ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে দিলাম। তারপর মা দুপুরের নাস্তা করতে ডাক দিলেন। আমি ছোটভাইকে নিয়ে গেলাম। এই গরমে এখনো বাবা অফিসে।
গরমের তীব্রতায় কিছু খেতে পারছি না। বিশেষ করে তরকারী যখন গরম তখন আর কি করার। তারপরও ফ্রিজের পানি পান করলে একটু আরাম লাগছে।আস্তে আস্তে খেতে থাকি আমরা। বাবার কল পেলাম মা ধরলেন কথা বললেন। বাবা আজ এই গরমে বের হবে না অফিস থেকে। বিকালে যখন গরম কমবে তখন আসবেন। যাক নিশ্চিন্ত হলাম। অফিসে এসি আছে।
সকালে থেকে আকাশে এক টুকরা মেঘ দেখলাম না। এমনিতে গরমে ঘেমে অস্থির। ফ্যান চললেও ঘামছি। আর শরীরে উঠছে ঘামাচি। প্রচুর পানি খেতে হবে। না হলে সব পানি পড়ে গেলে সমস্যা হবে। নিজেকে অনেকটা ডায়রিয়া রুগির মত লাগছে। কারন তাদের যেমন পানি শূন্যতা হয় তেমনি গরমে আমারও সব পানি বের হয়ে যাচ্ছে। আমি একটু চিন্তিত। যাই হোক এক প্লেত ভাতের সাথে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম পানি খেলাম। ছোট ভাই আর মাও মোটামুটি খেল। আম্মু আমাকে আরও পানি খেতে বলল যেন আমি সুস্থ থাকি।
খাওয়া শেষে যার যার রুমে আমরা যাই রেস্ট নিই। এমন সময় কারেন্ট চলে গেল। বাংলাদেশের কারেন্ট। টাকা দিয়ে কিনি ফ্রি নেই নাকি যে ইচ্ছামত সার্ভিস দেবে? তাও এই গরমে। উহহ জীবটা শেষ হতে লাগল। জানালা দিয়েও ভালো করে বাতাস আসতেছিল না। আম্মু আমাদের হাত পাখা দিলেন। আস্তে আস্তে বাতাস নিচ্ছিলাম। খুব গরম হাত ব্যথা হয়ে গেল। আর পারছি না। গরমে ঘেমে গোছল হয়ে গেলাম। এখন দুপুর ৩ টা বাজে। কড়া রোদ বাইরে। আমাদের কারেন্ট হয়ত এক ঘণ্টা পর আসবে। আজ সারাদিন এভাবেই চলছে। সকালে একবার গোসল করেছি। মনে হচ্ছে আবার যেয়ে করি। ছাদের ট্যাংকির পানি গরম হয়েছে। গোসল করলে মারা যাব।
আমাদের পরিবারটি আর পাঁচটি পরিবারে মতি মধ্যবিত্ত। বাবার কষ্টের কারনে আমরা এত দুরে আস্তে পেরেছি। ছোট বেলা অনেক অভাব দেখেছি। বাড়িটা আমাদের নয়, ভাড়া থাকি। ভাড়া কম এর কারনে আমাদের বাসার এই অবস্থা। ভালো বাসায় থাকতে হলে বেশি টাকা লাগে আর আমাদের সামর্থ্য নেই। তাই কম টাকায় এই বাসা। আম্মু আমাকে আর ভাইকে এক রুমে নিয়ে বাতাস করছেন আর আমরা শুয়ে আছি। গরমে আমার মাথা ঘুরছে। মায়েরা এমনি হয়। এত গরমে আমার মাথা ঘুরছে তাহলে তার কেমন লাগছে চিন্তা কর। কখন ঘুমিয়ে গেলাম মনে নেই। ঘুম ভাংলে উঠে দেখি কারেন্ট এসেছে আর ফ্যান চলছে। তবে মাকে দেখলাম না। হয়ত পাশের রুমে রেস্ট নিচ্ছে। এমন সময় বাসায় কলিংবেল বেজে উঠল। তখন বাজে সন্ধ্যা ৫টা ৩০ মিনিট। খুললাম। দেখি বাবা এসেছে। আমাদের জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে এসেছে। খুব গরম তাই এনেছে। মধ্যবিত্তদের বাবারা এমনি হয়। দেখলাম বাবার শরীর ঘামে ভেজা।
বাবার হাত থেকে আইস্ক্রিম আমরা নিলাম। মা বাবাকে ফ্রেস হতে সাহায্য করে। তারপর বাবা গরমের কষ্ট কমাতে একটু গোসল করেন। তারপর আমরা সবাই এক সাথে বাইরে যাই। বাইরে বের হলে একটু কম গরম লাগে বিশেষ করে খোলা জায়গা। এখন একটু আরাম লাগছে। গরম একটু কম পাচ্ছি।
বাবা মা আর ভাইয়ের সাথে আমি গেলাম বাইরে। বাড়ির পাশে একটি খোলা মাঠ আছে আর একটি পুকুর আছে। অনেক ক্ষণ ছিলাম। রাত ৮ টায় বাসায় আসি আমরা। তখন বাসায় প্রবেশ করার পর দেখি অনেক গরম লাগছে। আবহাওয়াতে বলা হয়েছে আরও ২-৩ দিন এমন গরম থাকবে। তারপর কমবে। আর বৃষ্টি হয়ত আগামি ৭ দিন পর হতে পারে।
মা ফ্লোর মুছে আমাদের বিছানা বানিয়ে দিলেন। গরমে ফ্লোরে শুতে ভালো লাগে। আব্বু ছাদে যেয়ে পানির ট্যাংকি থেকে পানি ছাদে ঢাললেন। হয়ত এতে ছাদ একটু ঠাণ্ডা হতে পারে সেই আশায়। প্রতিবছর এই গরমের সময় আমাদের মত মধ্যবিত্তদের কষ্ট লাগে। খুব কষ্ট লাগে। একটু সুখের আশায় সারা জীবন এই মধ্যবিত্তরা অনেক পরিশ্রম করে। আমার এই লেখা সকল মধ্যবিত্তদের উৎসর্গ করলাম।
No comments:
Post a Comment